ইরানে বন্দিদের নির্যাতন, অবহেলার কাহিনি
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জানিয়েছিল, ২০১০ সাল থেকে তখন পর্যন্ত ইরানের কারাগারে অন্তত ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷
মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদী
মানবাধিকার নিয়ে কাজের জন্য জেলে আছেন নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদী৷ তার হার্টের সমস্যা আছে৷ তার স্বামীর অভিযোগ, জেল কর্তৃপক্ষ তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল পরীক্ষা করতে দিচ্ছে না৷ রাশিয়ায় নাভালনির মৃত্যুর পর তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷ সাধারণ মানুষদের প্রতি তার আহ্বান- রাজনৈতিক বন্দিদের যেন তারা ভুলে না যান৷
কবি ও শিক্ষক মাহভাশ সাবেত
বাহা-ই ধর্মে বিশ্বাসের জন্য ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন তিনি৷ পাঁচ বছর পর আবার তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ সেইসময় বিচারক বলেছিলেন, তিনি ‘শিক্ষা গ্রহণ করেননি’৷ বর্তমানে তিনি ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন৷ তার দাবি তিনি যখন তদন্তকারীকে বলেছিলেন, ‘একদিন আমি জেল থেকে বের হবো’ তখন তাকে উত্তর দেওয়া হয়েছিল, ‘‘অনুভূমিকভাবে নাকি উল্লম্বভাবে, আমরা সিদ্ধান্ত নেবো৷’’
জাভেদ রুহি
২০২০ সালের গ্রীষ্মে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ শীর্ষক বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রুহি৷ পুলিশের উপর হামলা ও ‘কোরান পোড়ানোর’ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তিনটি মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়৷ ২০২৩ সালের আগস্টে কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান৷ ‘অজানা কারণে’ তার মৃত্যু হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল৷ তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, গ্রেপ্তারের আগে তার জানা কোনো অসুখ ছিল না৷
চলচ্চিত্র নির্মাতা বাকতাশ আবতিন
তিনিও কারাগারে মারা যান৷ ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা’ চালানোর অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল৷ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কারাগারে তার করোনা হয়েছিল৷ ফুসফুসের রোগী হওয়া সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ অনেকদিন তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি৷ পরে একসময় তাকে কোমায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান৷
সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক কাভুস সাইদ-ইমামি
তিনি একজন প্রখ্যাত পরিবেশকর্মী ছিলেন৷ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ দুই সপ্তাহ পর তেহরানের এভিন কারাগারে তিনি মারা যান৷ পরে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তিনি আত্মহত্যা করেছেন৷ তবে যে কারাগারের সেল সবসময় ভিডিও দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হতো এবং যে সেলে তিনি একাই ছিলেন সেখানে তিনি কীভাবে আত্মহত্যা করতে পারলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷
ব্লগার সাত্তার বেহেশতি
অনলাইনে সরকারের সমালোচনা করায় ২০১২ সালের অক্টোবরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ এক সপ্তাহ পর তার আত্মীয়-স্বজনকে ডেকে জেল থেকে মৃতদেহ নিয়ে যেতে বলা হয়৷ পরে জেল থেকে ৪১ বন্দির লেখা খোলা চিঠিতে বলা হয়েছিল, তার পুরো শরীরে মারাত্মক আঘাত করা হয়েছে৷ এখন ন্যায়বিচারের আশায় ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছেন তার মা গহর এশঘি৷
কারাগারে নিহত তিন শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারী
২০০৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের বিতর্কিত পুনর্নিবাচনের প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আমির জাভাদিফার (বামে), মোহসেন রুহুলামিন (মাঝে) ও মোহাম্মদ কামরানি৷ একই বছর কারাগারে তারা মারা যান৷ তাদের সঙ্গে থাকা বন্দিরা অভিযোগ করেন, তাদের মারাত্মক নির্যাতন করা হয়েছে৷ তাদের পরিবারও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছে৷